রবিবার ঘরের মাঠে প্রায় ভরা গ্যালারির সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পেয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-১-এ হারাতে সমর্থকদের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। বুধবার নয়াদিল্লিতে সে রকমই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন ক্লেটন সিলভারা। কিন্তু এই ম্যাচে গ্যালারিতে একটিও মানুষ থাকবে না। যা ভাবাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতকে।
তবে যেহেতু এই ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ম্যাচ জিততে পারলে তাদের প্লে অফের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, তাই দলের ফুটবলাররা এমনিতেই যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামবেন এবং সারা ম্যাচে তেতে থাকবেন বলেই বিশ্বাস কোচের।
চলতি আইএসএলে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে নামার আগে কোচ কুয়াদ্রাত বলেন, “ফাঁকা গ্যালারির সামনে খেলা বেশ কঠিন। এ বার আমরা বাইরে গিয়ে যত ম্যাচ খেলেছি, আমাদের সঙ্গে সমর্থকেরা ছিলেন। তাই ওদের ছাড়া উজ্জীবিত হয়ে খেলা মুশকিল। তবে এই ম্যাচে যেহেতু আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছি, তাই দলের ফুটবলাররা যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামবে। আশা করি, ম্যাচে এর প্রভাব পড়বে। সারা ম্যাচেই ওরা উজ্জীবিত হয়ে থাকবে”।
ইস্টবেঙ্গল শেষ ম্যাচে জিতলে তারা ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করবে। অন্য দিকে চেন্নাইন এফসি বা নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মধ্যে একটি দল যদি তাদের শেষ দুই ম্যাচেই জয় পায়, তা হলে তারা ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে শেষ করবে এবং প্লে অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং ইস্টবেঙ্গলের যাত্রা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কিছু হলে ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে।
এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে প্রস্তুতি নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন দলের স্প্যানিশ কোচ। বলেন, “গত ম্যাচের পর আজই প্রথম আমরা অনুশীলন করলাম। কাল যে মাঠে খেলা, সেখানে এখনও নামতে পারিনি। তবে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে নামার আগে আমরা ইতিবাচক রয়েছি। আশা করি, কাল আমরা তিন পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে পারব। কারণ, দলের ছেলেরা উজ্জীবিত হয়ে খেলছে। ওরা প্লে-অফে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে”।
এ ছাড়াও আর এক সমস্যা, বুধবারের ম্যাচে পাবেন না দলের দুই নির্ভরযোগ্য ভারতীয় ফুটবলার গোলকিপার প্রভসুখন গিল ও মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীকে। এই নিয়ে কোচ বলেন, “গিল, শৌভিক সারা মরশুমেই ভাল পারফরম্যান্স করেছে। তাই ওদের অভাব তো অনুভব করবই। তবে যারা তাদের জায়গায় খেলবে, তারা নিশ্চয়ই দলকে সাহায্য করবে। আমাদের অন্য গোলকিপারদের কাছে এটা একটা বড় সুযোগ। যেই খেলুক, আশা করি, সে এই সুযোগটা ভারপুর কাজে লাগাবে”।
প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি, যাদের আর প্লে অফে ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই তারা চাপমুক্ত হয়েই খেলবেন বলে ধারণা কুয়াদ্রাতের। এটা যেমন তাঁর দলের পক্ষে ভাল হতে পারে, আবার খারাপও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, “পাঞ্জাব যেহেতু প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে, তাই ওদের সে রকম তাগিদ নেই এই ম্যাচটা জেতার। যেটা আমাদের আছে। তবে ওরা খেলাটা উপভোগ করবে। সেক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়তে পারি। তবে আমাদের ছেলেরা জেতার মানসিকতা নিয়েই নামবে। শারীরিক ভাবেও ওরা তিন পয়েন্ট অর্জন করার জন্য তৈরি”।
প্রতিপক্ষ নিয়ে তিনি আরও বলেন, “পাঞ্জাব এফসি এই মরশুমে ভাল খেলেছে। ওদের তিন বিদেশী হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণে ওঠে এবং গোল করে প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলে দেয়। আমাদের সে জন্য তৈরি থাকতে হবে। ওরা মরশুমের শুরুটা খারাপ করলেও ক্রমশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওদের গ্রিক কোচও যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে বলতে হবে। পুরো মরশুম লড়াইয়ের পর শেষটা খারাপ হয়নি ওদের”।
এই মরশুমের আগে দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলেন, কোচিং জীবনের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। মরশুমের শেষদিকে এসে আইএসএলজয়ী কোচ বলছেন, “যখন আমি এই দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন আমি জানতাম কাজটা কতটা কঠিন হবে আমার পক্ষে। এখন মরশুমের শেষে এসে মনে হচ্ছে, এমন অনেক কিছুই ঘটেছে, যা আমি চেয়েছিলাম। তবে ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে ক্লাব যেখানে ছিল, সেই জায়গায় ক্লাবকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এখনও অনেক পথ বাকি আছে। ক্লাবকে ভারতীয় ফুটবলের সেরা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। এখন আমরা ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছি”।
রিজার্ভ দল থেকে আনা তরুণ ফরোয়ার্ড মহীতোষ রায় সম্ভবত এই ম্যাচে সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামবেন। মঙ্গলবার তাঁকে সঙ্গে নিয়েই সাংবাদিক বৈঠকে এসেছিলেন কুয়াদ্রাত। তাঁকে নিয়ে কোচ বলেন, “মহীতোষের খেলা আমি কলকাতা লিগে দেখেছি। আমার মনে হয়েছে ওকে এ বার সিনিয়র দলের হয়ে খেলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত ওর সাহায্য দরকার হয়নি আমাদের। তাই পরিবর্ত হিসেবেও ওকে নামানো যায়নি। তবে এ বার ওকে দরকার হতে পারে”।
আর মহীতোষ নিজে বলেন, “আমি ভাগ্যবান যে, এরকম বড় ক্লাবের হয়ে এ রকম একটা মঞ্চে প্রথমবার নামার সুযোগ পাচ্ছি। তাই কোচেদের সবাইকে ধন্যবাদ। দলের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই অনুশীলন করছি আমি। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করব। কালকের ম্যাচ নিয়েই আমরা এখন বেশি ভাবছি। অন্য ভাবনা আমরা বাইরেই রাখছি”।