শনিবার আইএসএলের ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে হেরে গেলেও মোহনবাগান শিবির হতাশায় ডুবে যায়নি। কয়েক সপ্তাহ আগে লিগ শিল্ড জয়ের আনন্দ এখনও তাদের মনে আছে। তাদের দুঃখের কারণ একটাই, আইএসএল ফাইনালে জিতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারল না তারা।
শনিবার আইএসএল ১০-এর ফাইনালে প্রথমে ৪৪ মিনিটের মাথায় জেসন কামিংসের গোলে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। দ্বিতীয়ার্ধে, ৫৩ মিনিটের মাথায় জর্জ পেরেইরা দিয়াজ সমতা আনেন এবং ৮১ মিনিটের মাথায় বিপিন সিং ব্যবধান বাড়ান। বাড়তি সময়ের সাত মিনিটের মাথায় জাকুব ভইতুস তাদের জয় সুনিশ্চিত করে।
তিন সপ্তাহ আগেই লিগের শেষ ম্যাচে নিজেদের মাঠে মুম্বইকে হারিয়ে শিল্ড জিতে নিয়েছিল মোহনবাগান এসজি, সেই মুম্বই শনিবার নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে কাপ জিতে মাঠ ছাড়ে। প্রথমার্ধে মোহনবাগান কিছুক্ষণের জন্য দাপুটে পারফরম্যান্স দেখালেও দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ায় অতিথিরা এবং বাজিমাত করে। ভরা গ্যালারির হাজার ষাটেক দর্শকের তুমুল চিৎকার কার্যত উপেক্ষা করে সারা ম্যাচে বেশিরভাগ সময় তারাই দাপুটে ফুটবল খেলে বাজিমাত করে।
ম্যাচের পর মোহনবাগান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস স্বীকার করে নিতে বাধ্য হন, “আমরা একটা গোল করে এগিয়ে গেলেও প্রতিপক্ষের চেয়ে ভাল খেলতে পারিনি। মুম্বই আমাদের চেয়ে ভাল খেলেছে। ওদের আমরা চাপে ফেলতেই পারিনি। মুম্বই বরং অনেক সোজা ও স্বাভাবিক ফুটবল খেলেছে। আমরা ওদের চাপে ফেলার সুযোগই পাইনি। এটা অবশ্যই ওদের কৃতিত্ব”।
হারের পর ফাইনালের প্রথম গোলদাতা জেসন কামিংস বলেন, “ফাইনালে যারা ভাল খেলেছে, তারাই জিতেছে। আমার মনে হয় জেতার তাগিদটা ওদেরই বেশি ছিল। তাই ওরাই ভাল খেলেছে। ফুটবলে এ রকমই হয়। কখনও জয় আসে, কখনও হার। জীবনও এ রকমই”।
তবে ফাইনালে হেরে যাওয়ায় ভেঙে পড়েনি সবুজ-মেরুন শিবিরের সেরা তারকারা। কারণ, তিন সপ্তাহ আগেই লিগ টেবলে এক নম্বর হিসেবে শেষ করে লিগ শিল্ড জিতেছে তারা। কামিংসের কথায় সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট। বলেন, “আমাদের ইতিবাচক দিকগুলোই মনে রাখতে হবে। এই মরশুম আমাদের ভালই কেটেছে। শিল্ড জয় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এটা ঠিকই যে আমরা হতাশ, বিধ্বস্ত। এই ফাইনাল ম্যাচটা আমরা সমর্থকদের জন্য জিততে চেয়েছিলাম। ওরা সারা মরশুম আমাদের পাশে ছিল। আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছে। ফাইনালেও প্রচুর সমর্থক আমাদের সমর্থন করেছেন। কিন্তু কী আর করা যাবে, দিনটা আমাদের ছিল না”।
আইএসএল শেষ হতে না হতেই অবশ্য আগামী মরশুমের ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে ক্লাবে। কারণ, আগামী মরশুমে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে তারা। লিগ শিল্ড জয়ের ফলে তারা এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে সরাসরি খেলবে। এই টুর্নামেন্টে তাদের অভিযান শুরু হওয়ার কথা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে।
কামিংস আগামী মরশুম নিয়ে বেশ আগ্রহী। এ মরশুমে এক ডজন গোল পাওয়া ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড বলেন, “সামনে মরশুমের দিকে তাকিয়ে আছি। দেখে নেবেন, আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে ফিরব। পরের মরশুম আরও উত্তেজনায় ভরে উঠবে। সেই দিনগুলোর অপেক্ষাতেই আছি। এএফসি (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২)-এ আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের সেই ক্ষমতা অবশ্যই আছে। তাই আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু শিখতে হবে। তার আগে অবশ্য ছুটিটা উপভোগ করে নিই। দীর্ঘ মরশুম পেরিয়ে এসেছি। এখন দেশে ফিরে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে”।
কামিংসের সতীর্থ দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ফাইনালে হার নিয়ে বলেন, “আমার মনে হয়, দিনটা আমাদের ছিল না। আমরা ভাল খেলেছি ঠিকই। কিন্তু সব ম্যাচ তো আর জেতা যায় না। দলের ছেলেদের জন্য গর্বিত। সারা মরশুমে প্রত্যেকে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। শুধু ফাইনালের দিনই তা হয়নি। দুর্ভাগ্য আমাদের”। তাঁরও ভাবনায় ঢুকে পড়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর কঠিন চ্যালেঞ্জের ভাবনা।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, যে অঞ্চলে কাতারের আল ঘারাতা, উজবেকিস্তানের নসফ এফসি, তাজিকিস্তানের ইস্তিকলল এফসি ইতিমধ্যেই রয়েছে। এ ছাড়া সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, জর্ডন ও বাহরিনের সেরা ক্লাবেরও খেলার কথা। তাদের বিরুদ্ধে খেলে ভাল ফল করতে হলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে দলে আরও কয়েকজন ভাল ফুটবলার দলে এনে পারফরম্যান্সেও অনেক উন্নতি করতে হবে।
ফাইনালের পর দেশে ফেরার আগে মোহনবাগানের হেড কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আগামী মরশুমে আরও শক্তিশালী দল গড়ব আমরা। কাদের ছাড়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত ফুটবলারদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করার পরই নেওয়া হবে”। কলকাতার সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহেই নতুন দল গঠন নিয়ে কোচের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।