
দিমিত্রি পেত্রাতোস, মোহনবাগান সমর্থকদের নয়নের মণি, আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি এত মূল্যবান। গত মরসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার এ বার চোটের কারণে কিছুটা ব্যাকফুটে ছিলেন। গোল পাচ্ছিলেন না, চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু ভাগ্য সহায় হচ্ছিল না। তবে শেষমেশ তাঁর সুবর্ণ মুহূর্ত এল ঠিক ম্যাচের সংযুক্তি সময়ে। তাঁর দুর্দান্ত গোলেই মোহনবাগান আবারও আইএসএল লিগ-শিল্ড জয় করল।
ঘরের মাঠ যুবভারতীতে ওড়িশাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ভারতসেরা হল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। লিগ পর্ব শেষ হওয়ার আগেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে নিল তারা, কারণ এখনও দু’টি ম্যাচ বাকি থাকলেও ২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে মোহনবাগান। পেত্রাতোসের গোলের পর মাঠে নেমে কোচ হোসে মোলিনার উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছিল, এই জয় তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শান্ত স্বভাবের মোলিনাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।
ম্যাচের ৯৩তম মিনিটে বাঁ পায়ের দুরন্ত শটে বল জালে পাঠিয়ে পেত্রাতোস ছুটে গেলেন গ্যালারির দিকে। যে সমর্থকেরা কঠিন সময়ে তাঁর পাশে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গেই ভাগ করে নিলেন উচ্ছ্বাসের মুহূর্ত। পরিচিত ‘স্টেনগান’ সেলিব্রেশন করলেন তিনি। গোটা দল তখন উল্লাসে মেতে উঠেছে। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে হাজার হাজার সমর্থক— সবাই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতলেন। যুবভারতীর পরিবেশ তখন অনন্য।
খেলার শুরু থেকেই মোহনবাগান আধিপত্য বজায় রেখেছিল। আক্রমণের ঝড় তুললেও প্রথমার্ধে কাঙ্ক্ষিত গোল আসেনি। মনবীর সিংহ একাধিক সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন। বিরতির সময় স্কোরলাইন ছিল ০-০। দ্বিতীয়ার্ধেও একই চিত্র। ওড়িশা পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল, গোলরক্ষক বারবার দলকে রক্ষা করছিলেন। গোলশূন্য ম্যাচের সমাপ্তি ঠেকাতে কোচ মোলিনা আক্রমণভাগে নতুন চমক আনেন। তিনি নামান পেত্রাতোস ও জেসন কামিংসকে।
৮৪ মিনিটে মোহনবাগানের আক্রমণের সামনে বিপর্যস্ত ওড়িশা, ফলস্বরূপ ডিফেন্ডার মোর্তাদা ফল লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। ১০ জনের দলে পরিণত হয় ওড়িশা। মোহনবাগান সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর ঠিক সংযুক্তি সময়ে পেত্রাতোস সেই মহামূল্যবান গোলটি করেন, যা গোটা যুবভারতীকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়।
রেফারির শেষ বাঁশির পর উৎসবের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। চোখে জল পেত্রাতোসের, আবেগে ভাসলেন সমর্থকেরাও। ফুটবলারদের স্ত্রী, বান্ধবীরা মাঠে নেমে পড়েন, সতীর্থরা পেত্রাতোসকে কাঁধে তুলে নেন। সবাই একসঙ্গে উদযাপন করেন এই ঐতিহাসিক জয়। চ্যাম্পিয়ন লেখা টি-শার্ট পরে সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন ফুটবলাররা।
আইএসএলের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও দল ৫০ পয়েন্টের গণ্ডি পেরোল। তবে মোহনবাগানের লক্ষ্য এখানেই শেষ নয়। গতবার লিগ-শিল্ড জিতেও আইএসএল কাপ হাতে তুলতে পারেনি তারা। এ বার সেই স্বপ্নপূরণে বদ্ধপরিকর হোসে মোলিনা। জোড়া ট্রফি জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।