
মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অস্থিরতা যেন কাটছেই না। প্রধান কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ রাশিয়া ফিরে গিয়েছেন, আর ফুটবলারদের মধ্যে বেতন বকেয়া থাকা নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ। পারফরম্যান্সেও তার প্রতিফলন স্পষ্ট— ১৭ ম্যাচে মাত্র ২টি জয়, ১০টি হার ও ৫টি ড্র। ১১ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাব।
অন্যদিকে, একেবারে উল্টো চিত্র মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবিরে। টানা দ্বিতীয়বার আইএসএল লিগ-শিল্ড জয়ের লক্ষ্যে দুরন্ত গতিতে ছুটছে লিস্টন কোলাসোরা। ১৮ ম্যাচ থেকে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে তারা টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে। ১২টি ম্যাচে জয়, মাত্র ২টি হার এবং ৪টি ড্র, সব মিলিয়ে এক অসাধারণ ফর্মে রয়েছে তারা।
এই দুই দলের পারফরম্যান্সের ফারাক এতটাই বিশাল যে আজ, শনিবার যুবভারতীতে অনুষ্ঠিত হতে চলা ডার্বিকে ঘিরে সেভাবে উত্তেজনা নেই ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। মোহনবাগান কোচ হোসে ফ্রান্সিসকো মলিনা সাধারণত ম্যাচের আগে রণকৌশল ফাঁস হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকেন। কিন্তু শুক্রবার যুবভারতীতে যখন দুই দল পাশাপাশি অনুশীলন করছিল, তখন তার মধ্যে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ দেখা যায়নি। বরং অভিনব ফিটনেস ট্রেনিং করাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন তিনি।
মোহনবাগানের ফিটনেস ট্রেনার মাঠে কাগজের পাতা ছড়িয়ে দিয়ে ফুটবলারদের একসঙ্গে তার ওপর দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। কাগজের বাইরে পা পড়লেই সেই খেলোয়াড় বাদ। এক খণ্ড কাগজের উপর সবাই দাঁড়ানো অসম্ভব হওয়ায় ফুটবলাররা এক পায়ে ব্যালান্স করার চেষ্টা করছিলেন। এমনকি গোলরক্ষক বিশাল কেথ জায়গা না পেয়ে মনবীর সিংহের কাঁধে উঠে পড়েন! এই অনুশীলনের উদ্দেশ্য ছিল ভারসাম্য রক্ষা করার দক্ষতা বৃদ্ধি।
এই নতুন ধরনের অনুশীলনে মোহনবাগানের ফুটবলাররা এতটাই মেতে ছিলেন যে মনে হচ্ছিল না একদিন পরই তাদের ডার্বি ম্যাচ খেলতে নামতে হবে। তবে ম্যাচকে সহজ ভাবে নিতে নারাজ মোহনবাগান কোচ। সাংবাদিক বৈঠকে মলিনা বলেন, “অনেকে মনে করছেন, এই ম্যাচ আমাদের জন্য সহজ হবে। কিন্তু আমি তা মনে করি না। পয়েন্ট টেবলে আমরা প্রথমে এবং ওরা শেষ স্থানে থাকলেও মহমেডান শেষ কয়েকটি ম্যাচে চমৎকার লড়াই করেছে। তারা আমাদের হারানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচটি সহজ হবে না।” রক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আলবার্তো রদ্রিগেস চোটের কারণে অনুশীলন না করায় তার খেলা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাই হয়তো মলিনা প্রতিপক্ষকে নিয়ে সতর্ক মন্তব্যই করেছেন।
অন্যদিকে, মহমেডান শিবিরে সমস্যা অন্য জায়গায়। বকেয়া বেতনের ক্ষোভ ফুটবলারদের মধ্যে বাড়ছে, কিন্তু এটিকেই অনুপ্রেরণা বানাতে চাইছেন অন্তর্বর্তীকালীন কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু। তিনি বলেন, “আমাদের সময়েও বেতন নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু এখনকার ফুটবলাররা অনেক বেশি পেশাদার। মাঠে নেমে তারা সেরাটাই দিতে চাইবে। তবে প্রত্যাশা পূরণ না হলে শতভাগ পারফরম্যান্স পাওয়া কঠিন।” নতুন বিদেশি স্ট্রাইকার মার্ক আন্দ্রে স্কিমারবককে খেলানোর কথাও জানিয়ে দেন তিনি।
মহমেডানের রক্ষণভাগের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ফ্লোরেন্ট অগিয়েরও জানিয়ে দেন, “যেকোনো পেশায় বেতন বকেয়া থাকলে কেউ খুশি থাকে না। কিন্তু আমরা মাঠে নেমে নিজেদের উজাড় করে দেব।” মহমেডানের পক্ষে এই ম্যাচে হারানোর কিছু নেই, বরং মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতে পারলে সেটা হবে তাদের মরশুমের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
ডার্বি ম্যাচ সবসময়ই বিশেষ কিছু, আর এই ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে একদিকে যখন মোহনবাগান আইএসএল জয়ের লক্ষ্যে ছুটছে, অন্যদিকে মহমেডান অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যস্ত। ফলাফল যাই হোক, ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন এক জমজমাট লড়াইয়ের।