
প্রথম সারির দল নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়ে ঝড় তুলেছিল কেরল ব্লাস্টার্স। সেই পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, সুপার কাপে মোহনবাগানের জন্য কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে। কারণ, সবুজ-মেরুন আগেই জানিয়েছিল, দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলবে তারা। দলে মাত্র এক বিদেশি — পর্তুগালের নুনো রেইস। অধিকাংশ অভিজ্ঞ ভারতীয় ফুটবলারও অনুপস্থিত। কোচের আসনে হোসে মোলিনার বদলে দায়িত্বে বাস্তব রায়।
কিন্তু শনিবার কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে সমস্ত আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিল মোহনবাগান। সাহাল আব্দুল সামাদ ও সুহেল ভাটের গোলের সৌজন্যে কেরল ব্লাস্টার্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে সুপার কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল সবুজ-মেরুন।
নতুনদের জ্বলজ্বলে পারফরম্যান্স
মোহনবাগানের প্রথম একাদশে থাকা ফুটবলারদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, সুপার কাপ মূলত ভারতীয় ফুটবলারদের তৈরি করার মঞ্চ হয়ে উঠেছে। সাহাল, আশিক কুরুনিয়ন, দীপক টাংরি এবং দীপেন্দু বিশ্বাস আইএসএলের পরিচিত মুখ হলেও, তাঁরা পুরো মরসুমে প্রথম একাদশে নিয়মিত ছিলেন না। এই ম্যাচে সুযোগ পেলেন তরুণ ফুটবলাররাও — অভিষেক সূর্যবংশী, সুহেল ভাট, অমনদীপ, সৌরভ ভানওয়ালা ও সালাউদ্দিন। গোলপোস্টে ছিলেন ধীরজ সিংহ, যিনি আইএসএলে বিশাল কাইথের ছায়ায় পড়ে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি।
বিশেষ নজর কেড়েছেন ডান প্রান্তে খেলা সালাউদ্দিন। তাঁর গতির দাপটে বারবার বিপাকে পড়ে কেরলের রক্ষণ। একই সঙ্গে দারুণ ফর্মে ছিলেন গোলকিপার ধীরজও। একের পর এক সেভ করে দলকে ভরসা দিয়েছেন।
ম্যাচের হাইলাইটস
শুরুতে বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল কেরলের হাতেই। নোয়া সাদাইউ, দানিশ ফারুক ও জ়িমেনেজ়ের মতো তারকারা একের পর এক আক্রমণ চালালেও মোহনবাগানের জমাট রক্ষণভাগ এবং ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা সফল হতে দেয়নি। দীপক টাংরি মাঝমাঠে রক্ষণের সুরক্ষার দায়িত্ব দুর্দান্তভাবে সামলেছেন।

২২ মিনিটে প্রথম গোল পায় মোহনবাগান। সালাউদ্দিনের দুর্দান্ত রানে নাওচা সিংহকে কাটিয়ে এগিয়ে যান, বক্সে ঢুকে বল বাড়িয়ে দেন সাহালের কাছে। ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দেন সাহাল।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ মিনিটে আশিকের ডান প্রান্ত ধরে আক্রমণে দ্বিতীয় গোল। দীপক টাংরির কাছ থেকে বল পেয়ে কেরলের ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পাস বাড়ান আশিক। সুহেল ভাট সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান ২-০ করে দেন।
কেরল একমাত্র গোল শোধ করে ম্যাচের সংযুক্তি সময়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহনবাগান।
দুর্দান্ত রক্ষণ এবং ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা
কেরলের আক্রমণভাগ একাধিক বার বাগানের রক্ষণকে চাপে ফেলতে চাইলেও, টাংরি এবং দীপেন্দুদের নেতৃত্বে মোহনবাগানের রক্ষণ দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। গোলকিপার ধীরজও একের পর এক নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দলকে এগিয়ে রাখেন।
বিশেষ করে, বাস্তব রায় নোয়া সাদাইউয়ের গতির বিরুদ্ধে দারুণ পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। তাঁকে বারবার বল নিয়ে বক্সে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়নি, ফলে কেরলের মূল অস্ত্রই ভোঁতা হয়ে যায়।
সামনে আরও বড় স্বপ্ন
এদিনের জয় সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মরসুমে আরও একটি ট্রফি জয়ের আশা বাড়িয়ে দিয়েছে বাস্তব রায়ের ছেলেরা। আগামী দিনে সেমিফাইনালে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ হবে এফসি গোয়া ও পঞ্জাবের মধ্যকার বিজয়ী দল।
কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ভারতের তরুণ ফুটবলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। এখন দেখার, এই স্বপ্নের সফর কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে মোহনবাগান।