ফের দুঃসময় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট শিবিরে। চোট-আঘাত ও কার্ড সমস্যায় জর্জরিত সবুজ-মেরুন শিবির। ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি ও ব্রেন্ডান হ্যামিলের চোট। ফরোয়ার্ড আরমান্দো সাদিকু ও মিডফিল্ডার দীপক টাঙরির কার্ড সমস্যা। শনিবার মাঠে নামতে পারবেন না এই চারজনের কেউই। আর এক ডিফেন্ডার আশিস রাইও পুরোপুরি ফিট নন। তিনিও হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে অনিশ্চিত। 

ডিসেম্বরের শেষ দিকে যখন টানা তিন ম্যাচে হারে মোহনবাগান, তখন দলের যে রকম অবস্থা ছিল, এখনও প্রায় সে রকমই অবস্থা। সুমিত রাঠি, রাজ বাসফোর, সুহেল ভাটদের মতো তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে মাঠে দল নামাতে হবে হয়তো। 

যদিও এই নিয়ে খুব একটা চিন্তিত মনে হল না দলের প্রধান কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে। তাঁর হাতে যে খেলোয়াড়রা আছেন, “তাঁদের নিয়েই লড়াই করতে চান তিনি। শনিবার ঘরের মাঠে তাঁর দল নামবে জয়হীন হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে। তার আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের স্প্যানিশ কোচ বলেন, কোনও অজুহাত দিতে চাই না। কালই ম্যাচ। সুতরাং যে খেলোয়াড়রা হাতে আছে, তাদের মধ্যে থেকেই সেরা এগারোজনকে বেছেই দল নামতে হবে। আমাদের হাতে ভাল স্কোয়াড আছে। যারা খেলবে, তারা তৈরি। সবাইকেই মাঠে নামাতে পারি”। 

গত মাসে কলিঙ্গ সুপার কাপে এই হায়দরাবাদের বিরুদ্ধেই এক গোলে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ২-১-এ জেতে মোহনবাগান। শেষ মুহূর্তের জয়সূচক গোলে জিততে হয় তাদের। ডিসেম্বরে আইএসএলের প্রথম মুখোমুখিতেও শেষ ১১ মিনিটে জোড়া গোল করে জেতে তাঁর দল। এই দুই কষ্টার্জিত জয়ের মতো শনিবারও তাদের কষ্ট করেই জিততে হতে পারে, এমন আশঙ্কাও করছেন অনেকে।   তবে আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নন হাবাস। বলেন, “সব ম্যাচই কঠিন। সে সুপার কাপ হোক বা আইএসএল। প্রতি ম্যাচে একই রকম মানসিকতা, দক্ষতা, তীব্রতা বজায় রাখা কঠিন। এ বার আমরা তৈরি হয়ে মাঠে নামছি। প্রতিবারই যে একই রকম খেলা হবে, তার কোনও মানে নেই”। ইঙ্গিতটা যে দাপুটে জয়ের দিকেই, তা আন্দাজ করাই যায়। কিন্তু দলের যা দশা, তাতে কি দাপট দেখানো সম্ভব হবে মোহনবাগানের পক্ষে? 

এই প্রশ্নে হাবাসের দাবি, “চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যার জন্য হয়তো আমাদের দলে একাধিক পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিন্তু মানসিকতা বা লড়াকু মনোভাব, খেলার স্টাইল এতটুকু পাল্টাবে না”। দুই বিদেশী হুগো বুমৌস ও জনি কাউকোকে নিয়ে জানতে চাইলে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি তিনি। বুমৌসের ব্যাপারে শুধু বলেন, “কাল ম্যাচের আগে পরিস্থিতি দেখে দল বাছাই করব”। কাউকো সম্পর্কে বলেন, “ও অনুশীলন করছে। আরও কিছুটা সময় লাগবে জনির”। 

টানা চার ম্যাচে জয়হীন থাকার পর শনিবারের ম্যাচে জিততে না পারলে আরও চাপে পড়ে যাবে তাঁর দল। তবে এই চাপকে বাড়তি গুরত্ব দিতে নারাজ হাবাস। বলেন, “পেশাদার ফুটবলে সব সময়ই চাপ থাকে। আমাদের পরের ম্যাচে তিন পাওয়াটা খুবই জরুরি। আমি পেশাদার কোচ হিসেবে একটাই কথা বলব, আমাদের ম্যাচটা জিততে হবে। প্রতিপক্ষ দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। তবে আমাদের দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে হবে”।  

সম্প্রতি হায়দরাবাদ এফসি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে হাবাস বলেন, “হায়দরাবাদের সমস্যা অনুভব করতে পারছি। কিন্তু এটাই বাস্তব যে ওদের মাঠে নামতে হবে এবং আমাদের মুখোমুখি হতে হবে। ওদের অনেক খেলোয়াড় ক্লাব ছেড়ে চলে গেলেও তরুণ ফুটবলাররা তো রয়েছে। সব ম্যাচে জেতা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ, একেকটা ম্যাচে একেকরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। জেতার জন্য আত্মবিশ্বাস দরকার। তবু, ওদের প্রতি আমাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধা, সন্মান আছে”।

মোহনবাগানের তারকা মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধে থাপা অবশ্য মনে করেন, হায়দরাবাদ এফসি-র তরুণ খেলোয়াড়রাই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, তাঁদের কিছু হারানোর নেই। বরং অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে। এই প্রসঙ্গে থাপা বলেন, “হায়দরাবাদকে ভাল দল বলতেই হবে ওদের তরুণ ফুটবলারদের জন্য। ওরা যথাসম্ভব বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে চায়, খেলতে চায়। সে জন্য ওরা লড়াইও করছে। ওদের চুক্তি পাকা করাটাই এখন ওদের ভাল খেলার তাগিদ। ওদের হালকা ভাবে নিলে আমাদের তার মাশুল দিতে হতে পারে। তাই শেষ মিনিট পর্যন্ত আমাদের খেলায় থাকতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা, কৌশল ঠিকমতো কার্যকর করতে হবে। ওরা যে কোনও সময় বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে”। 

তাঁর আশা, শনিবার দল জয়ে ফিরবে এবং ডার্বিতেই তার ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করেন থাপা। বলেন, “এর আগেও আমরা প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্ট পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেছি। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এর আগে অন্য কোচ ছিলেন, অন্য দর্শন ছিল। এখন অন্য কোচের অধীনে আছি। গত ম্যাচে আমরা কেমন খেলেছি, নিশ্চয়ই দেখেছেন। যারা শুরু থেকে খেলেছে, তারা তো বটেই, যারা পরে বেঞ্চ থেকে নেমেছে, তারাও কম লড়াই করেনি। এই ফাইটিং স্পিরিট ভবিষ্যতেও দেখতে পাবেন। দলের জন্য, জার্সির জন্য লড়াই করাই আমাদের কাজ”। 

তাঁর সেরা ফর্ম যে এখনও দেখাতে পারেননি, তা স্বীকার করে নিয়ে দেহরাদুনজাত এই মিডফিল্ডার বলেন, “আমার সেরাটা এখনও দেখাতে পারিনি। সে জন্য পরিশ্রম করছি। স্টাফও পরিশ্রম করছে। প্রতি ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের ফুটবল খেলতে হয়। আলাদা আলাদা পরিকল্পনা থাকে। কোচের কথামতো কাজ করতে হয় আমাদের। আমরা এখন অন্য ফরমেশনে খেলছি। দলের সবাই নতুন। আমিও। আমাদের সময় দরকার। এ ছাড়া চোট-আঘাত তো আছেই”। 

ভারতীয় শিবির থেকে ফিরে ক্লাবে যোগ দেওয়ার পর ফের ক্লাব কোচের সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যে সময় লাগছে, তাও স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি ২৬ বছর বয়সী এই তারকা ফুটবলার। বলেন, “ভারতীয় শিবির থেকে ফিরে এসে ক্লাবের সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা একটু কঠিন ছিল। কারণ, কোচ যখন এই সিস্টেমে দলকে খেলানো শুরু করেছেন, তখন আমরা, ভারতীয় শিবিরের খেলোয়াড়রা এখানে ছিলাম না। যখন আমরা ফিরে এলাম, একটা অন্য সিস্টেমে ফুটবল খেলে, তখন ক্লাবের কোচকে আবার আমাদের জন্য শুরু থেকে অনুশীলন করাতে হয়। এটা তাঁর পক্ষেও কঠিন ছিল”।  এই প্রসঙ্গে থাপা আরও বলেন, “ক্লাবের প্রথম ম্যাচের আগে আমরা চারটে সেশন পেয়েছিলাম। তার ওপর তখন, তাঁর প্রশিক্ষণে আমরা সবে খেলা শুরু করেছিলাম। তাই তাঁর সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আরও কয়েকটা সেশনের প্রয়োজন ছিল। দলের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও একটু সময় লেগেছে”। 

তবে সহাল আব্দুল সামাদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া ভাল এবং তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন বলে জানালেন থাপা। বলেন, “আমার আর সহালের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া আছে ঠিকই। আমাদের ভাল দল। যে-ই খেলুক, সবাই একে অপরকে সাহায্য করে, সে পরিশ্রমও করে। কারণ, আমরা ভারতের অন্যতম সেরা ক্লাব। আমাদের মাঠে নেমে সেরাটাই দিতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও যে, যে রকমই খেলুক, আমাকে সেরাটা দিতেই হবে। সবাই যদি এ কথা ভেবে খেলি, তা হলে আমরা উন্নতি করব ও সামনের দিকেও এগোতে পারব ঠিকই”।   

Enable Notifications OK No thanks