
ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্স খেলতে নামা মানেই জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে শুধু হলুদ রঙের হাজার হাজার জার্সি, শয়ে শয়ে ব্লাস্টার্স সমর্থকদের পোস্টার ও প্রিয় দলের সমর্থনে আকাশ ফাটানো চিৎকার, যা চলে ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই পরিবেশে অতিথি দলের খেলোয়াড়দের স্নায়ু ধরে রাখাটা যে কঠিন, তা এর আগে অনেক ফুটবলারই বলেছেন।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস অবশ্য চান, এই পরিবেশকেই কাজে লাগাক তাঁর দলের ফুটবলাররা। প্রতিপক্ষের সমর্থকদের চিৎকারেই নিজেদের উজ্জীবিত করে তুলুক তারা। বুধবার কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে মাঠে দল নামানোর আগে দলের ছেলেদের বোধহয় সেই পাঠই পড়াবেন তিনি। কী করে বিপক্ষের সমর্থকদের চিৎকারে নিজেদের উজ্জীবিত করে তুলতে হয়, তার পাঠ।
মঙ্গলবার কোচি উড়ে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের হাবাস বলেন, “কোচির পরিবেশে, সমর্থকদের চিৎকারে আমাদের ছেলেদের উজ্জীবিত হতে হবে। মানসিকতায় বদল আনতে হবে। এত দর্শকের মাঝে খেলা তো ভাল। গ্যালারিতে এক হাজার লোক থাকার চেয়ে ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে ভাল লাগে। আমরা পেশাদার। আমাদের এ ভাবেই ব্যাপারটা দেখতে হবে”।
কিন্তু বুধবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামার পর কী হবে, তার চেয়ে বেশি কোচ চিন্তিত, ম্যাচের আগে দলের ফুটবলারদের কী ভাবে ফের একটা কঠিন ম্যাচ খেলার জায়গায় নিয়ে আসবেন। আসলে রবিবার ডার্বি খেলার দু’দিন পরই বুধবার কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচ। যতই গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে হারুক ব্লাস্টার্স, দল হিসেবে তারা যে যথেষ্ট শক্তিশালী তা সম্প্রতি টের পেয়েছে এফসি গোয়া, যেদিন ৮১ মিনিট পর্যন্ত ২-১-এ এগিয়ে থাকার পরও ২-৪-এ হেরে মাঠ ছাড়ে তারা। এই কোচিতেই ঘটেছিল সেই কাণ্ড।
তাই কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ যে বেশ কঠিন, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই হাবাসের। বলেন, “তীব্রতার দিক থেকে এই ম্যাচটা ডার্বির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। প্রতিপক্ষকে ঠিকমতো বিশ্লেষণ করা খুব জরুরি। ওখানকার পরিবেশ কেমন হবে, প্রতিপক্ষ শিবির থেকে কোন কোন অস্ত্র ধেয়ে আসতে পারে, আমরা জানি। কিন্তু আমাদের নিজেদের নিয়ে ভাবা বেশি জরুরি। বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে খেলা দরকার এই ম্যাচটা। কী ভাবে, সেটাই ঠিক করতে হবে আমাদের”।
কিন্তু তাঁর চিন্তা, এমন কঠিন ম্যাচের আগে যথেষ্ট প্রস্তুতির অভাব। যা নিয়ে হাবাস বলেন, “এই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির সুযোগই পাইনি আমরা। একটা ম্যাচ হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরই আর একটা ম্যাচ, সে ভাবে ভাবনা-চিন্তাও করতে পারিনি ম্যাচটা নিয়ে। কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু আমরা পেশাদার। আমাদের তো মাঠে নামতেই হবে”।
বুধবারের ম্যাচে দুই খেলোয়াড়ের দিকে নজর থাকবে সবার। প্রীতম কোটাল ও সহাল আব্দুল সামাদ, যাঁরা দু’জনেই যে যাঁর নিজের রাজ্যের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন এই ম্যাচে। কে কতটা ভাল খেলবে, এই বিষয়টা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও মোহনবাগান কোচের তাতে কিছু আসে যায় না। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, “প্রতিপক্ষের কোনও একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে চিন্তা করা আমার অভ্যাস নয়। আমি পুরো দল নিয়ে ভাবি। খেলোয়াড়দের নিজস্ব আবেগ থাকতে পারে। কোচ হিসেবে সেই আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারি। সহাল তার রাজ্যের পুরনো দলের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ভাল খেলার চেষ্টা করবে, প্রীতমও তা-ই করবে হয়তো। আমার এখানে কীই বা বলার থাকতে পারে?”
দলের অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল এখনও চিকিৎসাধীন এবং তাঁকে মাঠে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে এই ম্যাচেই তাঁকে মাঠে ফেরানো হবে কি না, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারলেন না হ্যামিল। বলেন, “হ্যামিলকে এখনও সারিয়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা পরখ করে কাল ম্যাচের আগে প্রথম এগারো বাছতে হবে আমাদের। তার আগে ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই পরিস্থিতিতে রোটেশনে দল বাছা উচিত। দেখা যাক কে কেমন থাকে। তার ওপর নির্ভর করছে প্রথম এগারো কী হবে”।

তবে দলের গোলকিপার বিশাল কয়েথ লিগশিল্ডকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। এমনকী নিজের গোল্ডেন গ্লাভস খেতাবের চেয়েও তাঁর কাছে লিগশিল্ড বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান। বলেন, “এ বার আমি গোল্ডেন গ্লাভসের দৌড়ে আছি ঠিকই। কিন্তু গোল্ডেন গ্লাভসের চেয়ে দল লিগশিল্ড জিতলে বেশি খুশি হব। এখানে (কলকাতা) প্রত্যেকের কাছেই ডার্বির গুরুত্ব বেশি। তবে শিল্ডজয়ের জন্য এখন আমাদের কাছে প্রতি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ”।
ডার্বিতে হাঁটুতে চোট পান সবুজ-মেরুন শিবিরের নির্ভরযোগ্য গোলপ্রহরী। বুধবার তিনি খেলতে পারবেন কি না, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সমর্থকেরা। কিন্তু তাঁদের আশ্বস্ত করে বিশাল জানিয়ে দিলেন, “আমি অনুশীলন করেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই ছোটখাটো চোট লেগেই থাকে। ওই নিয়েই খেলতে হয়”।
সমর্থকেরা এখন তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রবিবার ডার্বিতে দুটি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে যে ভাবে দলের সন্মান বাঁচান তিনি, তাতে সবাই মুগ্ধ। অনেকে মোহনবাগানের সর্বকালের সেরা গোলকিপারের তকমাও লাগিয়ে দিয়েছেন তাঁর পিঠে। এ সব নিয়ে বেশি ভাবতে রাজি নন বিশাল কয়েথ, সমর্থকদের এই ভরসার দাম দিতে চান।
এই নিয়ে তিনি বলেন, “সমর্থকদের প্রশংসা তো ভালই লাগে। আমার তরফ থেকে সব সময়ই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের পুরো দলই সমর্থকদের ভাল ফল উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব”। এখন পর্যন্ত তাঁর কাছে সেরা সেভ কোনটি জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এক কথায় উত্তর দিয়ে দেন, “রবিবার ডার্বিতে ক্লেটনের হেডটা সেভ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওটাই এখন পর্যন্ত সেরা”।