গত কয়েকটি ম্যাচে তিনি অনেক ম্যাচেই একাধিক পরিবর্তন করে দল নামিয়েছেন। ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচেও প্রথম এগারোয় পাঁচ-পাঁচটি পরিবর্তন করেছিলেন, কিন্তু এ বার আর কোনও ‘রোটেশন’ সেরা শক্তি নিয়েই বাকি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে চান ইস্টবেঙ্গল এফসি-র হেড কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। 

১৭ ম্যাচ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত লিগ টেবলের ৯ নম্বরে রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। ছ’নম্বরে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে তাদের তিন পয়েন্টের দূরত্ব। তার ওপর তাদের চেয়ে একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে সুনীল ছেত্রীর দল। অর্থাৎ, সেরা ছয় থেকে খুব দূরে নেই কলকাতার দল। কিন্তু সেখানে পৌঁছে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে গেলে বাকি সব ম্যাচেই জিততে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে। তাই কুয়াদ্রাত আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। 

দল নিয়ে গোয়া রওনা হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন আর আমাদের খেলোয়াড়দের সুরক্ষিত রাখার কথা ভাবলে চলবে না। কারণ, প্রতিটি পয়েন্ট এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোয়ায় আমরা তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য পূর্ণশক্তির দল নিয়ে নামব। এতদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছেলেদের খেলিয়েছি যাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সবাইকে চোটমুক্ত অবস্থায় পাই। মুম্বই, চেন্নাইন ও ওডিশার বিরুদ্ধে তাই রোটেশনে খেলিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মরা-বাঁচার সময়। তাই এখন হাতের সব তাসই ব্যবহার করতে হবে”। 

গত পাঁচটি ম্যাচে জয়হীন এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ ও পরের চারটি ম্যাচ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এই ম্যাচে আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। এই তিন পয়েন্ট খুবই জরুরি। এখনও ১৫ পয়েন্ট পেতে পারি আমরা। প্লে অফে যেতে গেলে আমাদের নম্বর দরকার। এই ম্যাচটা আমাদের কৌশল কাজে লাগিয়ে তিন পয়েন্ট পাওয়ার আরও একটা সুযোগ। খুশির খবর যে, কাল হিজাজি শুরু থেকেই খেলতে পারবে”।

শুধু হিজাজি নন দলের আরও পাঁচ বিদেশী খেলোয়াড়ই বুধবারের ম্যাচে মাঠে নামতে পারেন বলে জানিয়ে দিলেন ক্লেটন সিলভাদের হেডস্যার। বলেন, “সল ক্রেসপো এখন সম্পুর্ণ সুস্থ এবং অবশেষে, সাতটা ম্যাচের পর আমাদের দলের ছয় বিদেশীই খেলার জন্য তৈরি থাকবে। চারজন শুরু করবে ও দু’জন বেঞ্চে থাকতে পারবে। আগে আমাদের পরিকল্পনা ছিল, মরশুমের শুরু থেকে যে বিদেশীরা খেলছিল, তাদের মধ্যে চারজনই বেশিরভাগ ম্যাচে প্রথম এগারোয় থাকবে আর নতুন দুই বিদেশী, ফেলিসিও ও ভিক্টর, যতদিন না পুরোপুরি মানিয়ে নিয়ে তৈরি হতে পারছে, তত দিন ওরা বেঞ্চ থেকে নেমে আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু পার্দো ও সল হঠাৎ চোট পেয়ে যাওয়ায় পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফলে পর্যাপ্ত অনুশীলন ও গেমটাইম ছাড়াই নতুন বিদেশীদের দিয়ে শুরু করাতে হয়”। 

গোয়ার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের কোচ কুয়াদ্রাত বলেন, “ওরা গত কয়েকটা ম্যাচে ভাল খেলতে পারেনি। ফুটবল এ রকমই। দল ছন্দে না থাকলে ভাল ফল করা কঠিন হয়ে ওঠে। কয়েক সপ্তাহ আগে এই দলটাই দুর্দান্ত ফর্মে ছিল এবং ধারাবাহিক ভাবে ভাল ফল করছিল। হঠাৎ করে এখন তারা আর সে রকম ধারাবাহিক নেই। আসলে আত্মবিশ্বাস, ইতিবাচক থাকা, নিজেদের প্রতি আস্থা বজায় রাখা এবং কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা— এগুলো প্রয়োজন হয়। দল ছন্দে না থাকলে অনেক কিছু বেঠিক হয়। যেমন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে বিষ্ণুর হেড পোস্টে লাগল। না হলে আমরা ওই ম্যাচে ২-০-য় জিততাম। ছোট ছোট জিনিস দলের গতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে। গোয়া এখন সেই পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু তারও শেষ আছে। তাই টানা হারের পর তারা ঠিক জয়ে ফিরবে। কিন্তু সেটা যাতে আমাদের বিরুদ্ধে না হয়, সেই চেষ্টা করতে হবে আমাদের”।  

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এখন আমরা শুরুতে গোল করলেও কখনও তা ধরে রাখতে পারছি, যেমন হায়দরাবাদ ও চেন্নাইনের বিরুদ্ধে পেরেছি, কিন্তু কখনও এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারিনি। ফলে এগিয়ে গিয়েও জয় আসেনি। একটা ফাউল বা পেনাল্টি বা কর্নারে সেই ছন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ রকম যাতে আর না হয়, সেই চেষ্টা করছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এগুলো হচ্ছে এবং আমাদের খেলোয়াড়দের এগুলো বুঝতে হবে। আশা করি, শেষ পাঁচ ম্যাচে আমরা ছন্দে থাকব এবং পুরো পয়েন্টই অর্জন করব”। 

কিন্তু সারা লিগে এই সমস্যার সমাধান যে তিনি করতে পারেননি, সে কথাও স্বীকার করে নেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “দলের ছেলেরা লড়াই করছে। ওরা কৌশল জানে। ওরা ফোকাসড্ এবং নিজেদের কাজ করছে। কিন্তু ওদের আরও উন্নতি করতে হবে। যখন কোনও ম্যাচে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তখন সেটা ধরে রাখার মতো ভাল খেলতে হয়। এই ব্যাপারটাতেই আমি খুব হতাশ হয়েছি। এই সমস্যা সমাধানের অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু এখনও পেরে উঠিনি। দলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই সমস্যা এতদিনে মিটে যাওয়ার কথা ছিল। জেতার জায়গা থেকে অনেক পয়েন্ট (১৬) আমরা খুইয়েছি। কারণ, ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি অথবা এমন সময়ে ফাউল করেছি, পেনাল্টি, কর্নার দিয়েছি, যা থেকে গোল খেয়েছি। এগুলো আরও ভাল ভাবে আটকানো উচিত ছিল”। 

Enable Notifications OK No thanks