সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে যে মোহনবাগান এসজি-র চেয়ে পিছিয়েই আছে তারা, এ কথা স্বীকার করে নিতে কোনও দ্বিধা নেই ইস্টবেঙ্গল এফসি-র স্প্যানিশ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাতের। তবু দলের ফুটবলারদের ওপর তাঁর যথেষ্ট ভরসা আছে বলেই যে ক্ষীণ আশার আলো মনের মধ্যে জ্বালিয়ে রেখেছেন তিনি, সেই আশা থেকেই বলছেন, এই ডার্বি জিতে ছন্দে ফিরে আসতে পারে তাঁর দল।
রবিবার ম্যাচ ড্র হলেও ইস্টবেঙ্গলের প্লে অফের রাস্তা কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তিন পয়েন্ট পেলে তারা সেই রাস্তায় থাকবে। যদিও আশেপাশের দলগুলি কেমন কী করছে, সে দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। অর্থাৎ, রবিবারের ডার্বি কার্লস কুয়াদ্রাতের দলের কাছে কার্যত আইএসএলের ফাইনালের মতো। হারা চলবে না কিছুতেই।

এই অবস্থায় যে সমানে দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কুয়াদ্রাত, তা শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর কথাবার্তাতেই স্পষ্ট বোঝা গেল। যখন বললেন, “কাল আমরা আমাদের প্রতীকের সন্মান বাঁচাতে নামব। তাই দলের ছেলেরা হার না মানা মনোভাব নিয়েই মাঠে নামবে, যাতে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটানো যায়”।
চলতি মরশুমে একাধিকবার কলকাতা ডার্বি দেখেছে ভারতীয় ফুটবল এবং বেশিরভাগ ম্যাচেই যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে তাঁর দল, তা মনে করিয়ে দিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “এ মরশুমে চারটি ডার্বির মধ্যে আমরা দুটোতে জিতেছি। তৃতীয় ম্যাচে আমরা জয়ের কাছেও পৌঁছে যাই। কিন্তু পেট্রাটস ৮৮ মিনিটে গোল করে ম্যাচটা ড্র করে দেয়। অন্য ডার্বিতে আমরা হেরে যাই। দেখা যাক কাল কী হয়”।
তবে এই ম্যাচে যে তাঁরা ‘আন্ডারডগ’ হয়েই নামবেন, এক কথায় তা স্বীকার করে নেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, “হ্যাঁ, আমরা কাল আন্ডারডগ হয়েই মাঠে নামব। কারণ, সাম্প্রতিক ফলের বিচারে মোহনবাগানই এগিয়ে থাকবে। এই ব্যাপারে আমাদের সৎ ও নম্র হওয়া উচিত। তবে দলের খেলোয়াড়দের ওপর আমার ভরসা আছে। আমি জানি, ওরা সেরাটাই দেবে। আমাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। এ মরশুমে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচে যত পরিকল্পনা করেছি, প্রায় সবই কার্যকরী হয়েছে”।

নতুন বছরে অপরাজিত থাকা মোহনবাগানকে হারানো যে মোটেই সহজ হবে না, তাও স্বীকার করেন কুয়াদ্রাত। বলেন, “আমরা জানি, মোহনবাগানকে হারানো কঠিন। কিন্তু অঙ্কের হিসেবে কাল হারলেও আমাদের সেরা ছয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। আরও ১২ পয়েন্ট পেতে পারি আমরা। এই ক’দিনে অনেক কিছুই হতে পারে। ওরা অনেক দিন বিশ্রাম পাওয়ার পর মাঠে নামবে। ওরা শেষ ম্যাচ খেলেছে এক তারিখে। আর আমরা মাত্র দু’দিন আগেই ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে হবে এবং নিজেদের সেরাটাও দিতে হবে”।
এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ছয় বিদেশীকে মাঠে নামানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঠে নামাননি। যা নিয়ে সমর্থকদের মনে অনেক প্রশ্নও ছিল। সেই কৌতুহলের নিরসন করে কুয়াদ্রাত এ দিন বলেন, “সল ক্রেসপোকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু নুঙ্গার পেশীতে টান ধরায় আমরা ওকে নামানোর সুযোগই পাইনি। তাই গত ম্যাচে আমরা পাঁচজন বিদেশীকে খেলাতে পেরেছি। আশা করি, কাল আমরা ছয় বিদেশীকেই খেলাতে পারব। যার ফলে দলে অনেক বেশি শক্তি ও বিকল্প থাকবে”। এই শক্তি নিয়ে রবিবার রাতে যুবভারতীতে মশালের আগুনের উত্তাপ ছড়াতে পারে কি না কার্লস কুয়াদ্রাতের লাল-হলুদ বাহিনী, সেটাই দেখার।